স্টাফ রিপোর্টার ::
রামসার সাইট হিসেবে ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং যাদুকাটা ও ধোপাজান নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (তাহিরপুর থানা) মোহাম্মদ আলমগীর।
সম্প্রতি জেলার স্থানীয় দুটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২ জুলাই, ২০২৫ দৈনিক সুনামকণ্ঠে ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন’ ও দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর পত্রিকায় ‘পর্যটনের নামে ধ্বংস হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য’ শীর্ষক দুটি পৃথক প্রতিবেদন আদালতের নজরে আসে।
এই প্রতিবেদনগুলোতে টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশগত বিপর্যয়, অবৈধ বালু উত্তোলন এবং স্থানীয় মানুষের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে আদালত মন্তব্য করেন যে, সুন্দরবনের পর জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ জলাভূমি হিসেবে ঘোষিত টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার ঘোষণার পরও সুরক্ষিত ব্যবস্থাপনার অভাবে আজ অভিভাবকহীন। মাছ, গাছ, পাখি এবং মিঠাপানির মাছের জন্য বিখ্যাত এই হাওরে অবাধ আহরণের কারণে মাছের সংখ্যা কমছে। হাওর ভরাট, বন ও আবাসস্থল ধ্বংস, মানুষের উৎপাত ও শিকারের ফলে পাখির সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে।
বিশেষ করে, যে অভয়ারণ্যে ট্রলারচালিত নৌকা প্রবেশ নিষিদ্ধ, সেখানে অবাধে শতাধিক হাউসবোট চলাচল করছে, যা হাওরের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও, টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটনের কারণে স্থানীয় মানুষ কোনো সুবিধা না পেয়ে বরং নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং হাওরের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যাদুকাটা ও ধোপাজান নদী থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে শত কোটি টাকার বালু লুটপাটের অভিযোগও আদালতের নজরে আসে।
এসব কর্মকান্ড বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত), বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২, মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০, বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩, এবং বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর আওতায় আমলযোগ্য অপরাধ হতে পারে বলে আদালত মনে করেন। আদালত ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৯০ (১) (সি) ধারায় প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে এই বিষয়টি আমলে নিয়েছেন এবং বিস্তারিত তদন্তের জন্য নির্দেশ জারি করেছেন।
আদেশে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ১০ কার্যদিবসের মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরে চলাচলকারী হাউসবোটের সঠিক তালিকা, মালিকের নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, অবস্থান ঘাট এবং যাতায়াত রুট উল্লেখ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সাথে, হাউসবোটগুলো the inland shipping ordinance ১৯৭৬ অনুযায়ী রেজিস্ট্রিকৃত কিনা, উপরোক্ত আইন মোতাবেক চলাচল করে কিনা এবং নিয়মিত সরকারি কর পরিশোধ করে কিনা তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
এছাড়াও, ‘পর্যটনের নামে ধ্বংস হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য’ এবং ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন’ শীর্ষক সংবাদের সত্যতা নিরূপণ এবং উল্লিখিত অপরাধসমূহের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), সিলেটের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তকালে আসামিদের শনাক্তকরণ, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র প্রস্তুত, এবং ঘটনাস্থল সংশ্লিষ্ট আলামত (যেমন পাইপ, বলগেট, ড্রেজার মেশিন, ড্রামট্রাক, বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, অবৈধ হাউসবোট) তাৎক্ষণিকভাবে জব্দসহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং পিবিআই, সিলেটের তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এই বিষয়ে পরবর্তী প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. মল্লিক মঈনুদ্দিন সোহেল জানান, সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের আলোকে আদালত এই নির্দেশনা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া টাঙ্গুয়ার হাওর সুরক্ষার জন্য। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও ধোপাজান বালু মহাল লুটের বিষয় তদন্ত করে পিবিআইকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
টাঙ্গুয়ার হাওরে অবৈধ হাউসবোট জব্দের নির্দেশ
- আপলোড সময় : ২৮-০৭-২০২৫ ০৮:০১:১১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-০৭-২০২৫ ০৮:৪৬:১৭ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ